এপ্রিল 18, 2024

বার্সেলোনায় থাকার জন্য যে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন মেসি

1 min read

‘লিওনেল মেসি যদি থাকতেন…’—এমন আক্ষেপ প্রায়ই করেন বার্সেলোনার সমর্থকেরা।

আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরিয়ে আনার কথাও শোনা যায় প্রায়ই। আগামী বছরের জুনে পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বার্সেলোনায় ফিরবেন মেসি—এমন অপেক্ষায় দিনও গুনছেন বার্সার সমর্থকদের অনেকে। তবে ২০২০ সালে বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তিটা হয়ে গেলে এমন আক্ষেপ আর অপেক্ষায় থাকতে হতো না সমর্থকদের।

কিন্তু ওই সময় কেন হয়নি চুক্তিটা?

ঘটনার দুই বছর পর স্প্যানিশ পত্রিকা এল মুন্দো প্রকাশ করেছে সম্ভাব্য সেই চুক্তির খুটিনাটি অনেক কিছু। এতে দেখা যাচ্ছে, চুক্তি নবায়নে বার্সেলোনাকে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা।

এর মধ্যে ছয়টি শর্তই মেনে নিয়েছিল বার্সেলোনা, বাকি তিনটির দুটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়, আরেকটি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়। মেসি ও তাঁর পরিবারের আপত্তি ছিল ওখানেই। এরপর আর চুক্তিটি হয়নি।

এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা।

দীর্ঘ মেয়াদের চুক্তি না করলেও বার্সেলোনায় থাকার ইচ্ছা ছিল মেসির। কিন্তু বেতন নিয়ে জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত গত বছরের আগস্টে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিতে হয় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে।

২০২০ সালে চুক্তি নবায়নের জন্য মেসি যে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি, তাঁর আইনজীবি জর্জ পেকোর্ট, বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তামেউ ও বার্সা সিইও স্কার গ্রাউয়ের মধ্যকার মেইল চালাচালির সূত্রে।

এল মুন্দোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৪ মে মেসির বাবাকে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাবপত্র পাঠান বার্সা প্রেসিডেন্ট বার্তামেউ।

প্রস্তাবে বলা হয়, চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর, এরপর প্রতিবছরই এটা বাড়তে থাকবে যদি না ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মেসি চলে যাওয়ার জন্য বলেন।

এক সপ্তাহ পর মেসির আইনজীবী জর্জ পেকোর্ট বার্তামেউ, গ্রাউ ও বার্সার আইন বিভাগের প্রধান র‌্যামন গোমেজ-পন্টির উদ্দেশে একটি ই–মেইল পাঠান।

সেখানে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ৯টি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়।

ই–মেইলের অনুলিপি দেওয়া হয় মেসির বাবা ও আলফনসো নেবো নামের একজনকে, যার পরিচয় বলা হয়েছে ‘ফ্যামিলি অফিসে’র প্রধান।

চুক্তির শর্তগুলো ছিল

১. নতুন চুক্তি হবে ৩ বছরের।

২. কর্তিত বেতন সুদসহ ফেরত: কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০-২১ মৌসুমে ২০ শতাংশ বেতন কমানো হয়েছিল মেসিসহ সব ফুটবলারের। মেসির দাবি, এর পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ২০২১-২২ মৌসুমে ১০ শতাংশ, ২০২২-২৩ মৌসুমে বাকি ১০ শতাংশ। শুধু বেতনের কেটে নেওয়া অংশই নয়, এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদও দিতে হবে।

৩. নিজের ও সুয়ারেজের পরিবারের জন্য ক্যাম্প ন্যুতে প্রাইভেট বক্স।

৪. ক্রিসমাসের ছুটিতে পুরো পরিবার নিয়ে আর্জেন্টিনায় যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট বিমান।

৫. চুক্তি নবায়নের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো বোনাস।

৬. রিলিজ ক্লজের ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা: ২০১৭ সালে করা সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী মেসির রিলিজ ক্লজ ছিল ৭০ কোটি ইউরোর কাছাকাছি। নতুন চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ একেবারে কমিয়ে আনার শর্ত দেন তিনি।

‘কমিয়ে আনা’ বলতে প্রায় বিলুপ্ত করে দেওয়া। ৭০ কোটি ইউরো থেকে মাত্র ১০ হাজার ইউরো। অর্থাৎ চুক্তি থাকাবস্থায় কোনো ক্লাব চাইলে যেন বার্সাকে ১০ হাজার ইউরো দিয়েই নিয়ে যেতে পারে।

৭. বেতন বৃদ্ধি: স্পেন সরকার করের হার বাড়ানোয় বেতন বাবদ আয় কমে যাচ্ছিল মেসির। এ জন্য তিনি বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন, যাতে কর–পরবর্তী আয় আগের চেয়ে কম না হয়।

৮. ব্যক্তিগত সহকারীর চুক্তি নবায়ন: বার্সেলোনায় মেসির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন পেপে কস্তা। পে-রোলে তাঁর বেতন দিত বার্সেলোনা। ক্লাবের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনা বোর্ডের। মেসি শর্ত দেন কস্তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে হবে।

৯. ভাইয়ের জন্য কমিশন: মেসির ভাই রদ্রিগো বার্সেলোনার সঙ্গে কাজ করতেন ফুটবলারদের এজেন্ট হিসেবে। ওই সময় আনসু ফাতির এজেন্ট ছিলেন তিনি। মেসির শর্ত ছিল, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন করতে হবে।

এই শর্তগুলোর মধ্যে রিলিজ ক্লজ কমানো এবং চুক্তি নবায়ন বাবদ এক কোটি ইউরো বোনাসের শর্ত মানতে রাজি হননি বার্সা প্রেসিডেন্ট।

এ ছাড়া বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, ক্লাবের আয় ১১০ কোটি ইউরো পার হওয়ার পরই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে, যেহেতু বার্সেলোনা আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

বার্সেলোনার পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবটি পছন্দ হয়নি মেসি ও তাঁর পরিবারের। এর জেরে ওই বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে ক্লাবের কাছে বুরোফ্যাক্স পাঠান মেসি, যেখানে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান।

তবে বার্তামেউ প্রশাসন তখন ছাড়ার সুযোগ নেই জানালে আরও এক মৌসুম বার্সেলোনায় থেকে যান মেসি।